বাংলা নববর্ষ সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান

১। এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/ তাপস নিঃশ্বাস বায়ে/ মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক/ এসো এসো --- গানটির গীতিকার কে?
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর( প্রকৃতি কবিতা থেকে)
২। পহেলা বৈশাখ পালিত হয়- ইংরেজি ১৪ই এপ্রিল তারিখে
১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়-
১৯৯৫ সাল থেকে(বাংলা একাডেমির টাস্ক ফোর্স কর্তৃক গৃহীত)
৩। বাংলা সনের প্রবর্তক- মুঘল সম্রাট আকবর, ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০/১১ মার্চ। (প্রচলিত হিজরী সনের সাথে সমন্বয় করে আমীর ফতেহ উল্লাহ শিরাজী এ বাংলা সনের উদ্ভাবন করেন)
৪। বাংলা সনের মূল ভিত্তি - হিজরি সন।
৫। বাংলা সন প্রথমে পরিচিত ছিল- ফসলি সন হিসাবে।
৬। আকবরের রাজত্বের ঊনিশতম বর্ষে বঙ্গাব্দ প্রবর্তিত হয়।
৭। বঙ্গাব্দের দিন শুরু হয় সূর্যোদয় থেকে।
৮। বঙ্গাব্দ গণনা করা হয়- ৫ নভেম্বর ১৫৫৬ সাল থেকে( আকবরের সিংহাসন লাভের দিন থেকে
৯। খ্রিস্টীয় সাল হতে ৫৯৩ বিয়োগ করলে বাংলা সন পাওয়া যায়।
১০। নববর্ষ বরণ উৎসব শুরু করে -ছায়ানট ১৩৭২ বঙ্গাব্দে ,১৯৬৫ সাল
১১। বাংলা নববর্ষ ও চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে দেশের তিন পার্বত্য জেলায় উপজাতীয়দের ঐতিহ্যবাহী উৎসবের নাম কি? -বৈসাবি।
বৈ- বৈসুক -- ত্রিপুরাদের
সা- সাংগ্রাই -- মারমাদের
বি- বিজু - চাকমাদের 
১২। বাংলা নববর্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয় - ১৯৫৪ সাল থেকে( সুত্র: শাহাদুজ্জান খান বাংলা একাডেমি)
১৩। বৈশাখ নামের সাথে জড়িত নক্ষত্রের নাম- বিশাখা।
১৪। বাংলাদেশের জাতীয় সন - বাংলা সন।
১৫। পাহাড়ীদের সবচেয়ে বড় উৎসব- বৈসাবি।
১৬। বাংলা সাহিত্যে প্রথম ঋতু চেতনা নিয়ে আসেন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১৭। “বাংলা পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি”-
আখ্যায়িত করা হয় - শহীদুল্লাহ কমিটি নামে।
১৮। বাংলা ক্যালেন্ডারের সংস্কার উদ্যোগ নেয়া হয় - মেঘনাথ সাহার সুপারিশের ভিত্তিতে।
১৯। স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারি নথিতে বাংলায় নোট লেখা , সই করা এবং তারিখ প্রদানের প্রথা চালু করেন -
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ।
২০। সরকারি কাজকর্মে ইংরেজি সালের পাশাপাশি বাংলা সন ও তারিখ লেখার জন্য সরকারি নির্দেশ কবে জারি করা হয়?-
১ জানুয়ারি ১৯৮৭।
বাংলা ১৪০২ সালের ১ লা বৈশাখ থেকে আন্তর্জাতিক নিয়মের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলা একাডেমী সূর্যোদয় থেকে তারিখ গণনা রীতি পরিবর্তন করে রাত ১২ টা থেকে বাংলা দিনের তারিখ গণনার নিয়ম প্রবর্তন করে। (বিস্তারিত বাংলা উইকিপিডিয়াতে)

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে সর্বপ্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রচলন হয়। প্রথমে এর নাম বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা ছিল বলে জানা যায়। ১৯৯৬ সাল থেকে এ শোভাযাত্রাকে মঙ্গল শোভাযাত্রা নাম দেয়া হয়। বাংলাদেশ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে গুরুত্বপূর্ণ অধরা (Intangible) সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

১৯৫৪ সালের পূর্ব বাংলার সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগ উৎখাত হয়ে যাওয়ার পরই শুধু যুক্তফ্রন্ট সরকার ও তার মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক বাংলা নববর্ষে ছুটি ঘোষণা করে বাঙালির জাতিগঠন ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে একটি সুস্পষ্ট পথনির্দেশ দান করেন এবং সে বছর বিপুল উৎসাহে বাঙালি তার নববর্ষ উদযাপন করে

১৯৬৭ সালে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কমিটি বাংলা সনের সংস্কার প্রস্তাবনার উন্নয়ন সাধন করেন। তা নিম্নরূপ :
১. সাধারণভাবে বাংলা বর্ষপঞ্জির বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতিমাসে ৩১ দিন এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত প্রতিমাসে ৩০ দিন গণ্য করা হবে।
২. গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির অধিবর্ষে যে বাংলা বছরের ফাল্গুন মাস পড়বে সেই বাংলা বছরকে অধিবর্ষ গণ্য করা হবে।
৩. অধিবর্ষে ফাল্গুন মাস ৩১ দিনে গণ্য হবে।
৪. আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী রাত ১২টায় তারিখ পরিবর্তিত হয় 

পহেলা বৈশাখ কেন সার্বজনীন উৎসব ?
পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব। এ উৎসবের সর্বজনীনতা অসাধারণ। পৃথিবীতে প্রচলিত অধিকাংশ বর্ষপঞ্জির উৎপত্তি কোনো না কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত, কিন্তু বাংলা নববর্ষের সঙ্গে ধর্মীয় অনুষঙ্গ নেই। কৃষিকাজ ও খাজনা সংগ্রহের ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই এর প্রচলন। পরে যুক্ত হয় ব্যবসা-বাণিজ্যের দেনা-পাওনার হিসাব মেটানো। এখন পয়লা বৈশাখ সব বাঙালির সর্বজনীন সাংস্কৃতিক আনন্দ-উৎসব। ধর্ম-সম্প্রদায়নির্বিশেষে বাংলা ভূখণ্ডের সব মানুষের প্রাণের উৎসব।