বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন : আগামী অর্থবছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমে ৬.৪% হবে

উন্নত অর্থনীতিগুলোর সম্ভাব্য সংরক্ষণবাদী নীতি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রপ্তানিমুখী প্রবৃদ্ধি অর্জনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। বরং বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী এই অঞ্চলের দেশগুলোর সামনে বিশ্বায়নের সুবিধা নিয়ে রপ্তানি ও কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ থাকবে।

বিশ্বব্যাংক গতকাল রোববার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এভাবেই দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিষয়টি তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনটি নিশ্চিত করেছে যে বিশ্বে এখনো সবচেয়ে দ্রুতগতিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী অঞ্চল হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া। পূর্ব এশিয়ার তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। সে অনুযায়ী এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চলতি ২০১৭ সালে বেড়ে ৬ দশমিক ৮ শতাংশে এবং ২০১৮ সালে ৭ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হবে; যা গত ২০১৬ সালে ছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।

সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশের শিল্প উৎপাদন সম্প্রতি বেড়ে রেকর্ড পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও পোক্ত অবস্থানে রয়েছে। সে অনুযায়ী চলতি ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এই হার ২০১৮ সালে অবশ্য খানিকটা কমে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে নামবে। তবে ২০১৯ সালে তা ৬ দশমিক ৭ শতাংশে উঠবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ও মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও জ্বালানি সরবরাহ কম হওয়ার কারণে এ দেশে ব্যবসায়ের ব্যয় বাড়ছে। এটিই বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা।
বিশ্বব্যাংক বছরে দুবার সাউথ এশিয়া ফোকাস নামের এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পারস্পরিক সম্পৃক্ততা উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রেখেছে। তবে এ অঞ্চলের দেশগুলো উন্নত বিশ্বে বড় ধরনের বাণিজ্য বাধার মুখে পড়বে। অবশ্য এসব দেশ তাদের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার উন্নত বিশ্বে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ফলে লাভবান হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেত্তি ডিক্সন বলেন, উন্নত অর্থনীতিগুলো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এবং দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে এগোচ্ছে। এর ফলে সেই সব দেশে দক্ষিণ এশীয় পণ্যের চাহিদা বাড়বে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে দক্ষিণ এশিয়ার পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও সরবরাহ বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া উচিত। এটি হলে এ অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য হারে কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্টিন রামা বলেন, রপ্তানি সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক নীতিমালা অব্যাহত রাখায় জোর দিতে হবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি
প্রকৃত জিডিপি ২০১৬ ২০১৭ ২০১৮ ২০১৯
প্রবৃদ্ধি (প্রাক্কলিত) (পূর্বাভাস) (পূর্বাভাস) (পূর্বাভাস)
আফগানিস্তান ১.২ ২.৪ ৩.৪ ৩.১
বাংলাদেশ ৭.১ ৬.৮ ৬.৪ ৬.৭
ভুটান ৬.৮ ৬.৮ ৭.৭ ১০.৫
ভারত ৬.৮ ৭.২ ৭.৫ ৭.৭
মালদ্বীপ ৪.১ ৪.৫ ৪.৬ ৪.৬
নেপাল ০.৬ ৬.০ ৫.৫ ৪.৫
পাকিস্তান ৪.৭ ৫.২ ৫.৫ ৫.৮
শ্রীলঙ্কা ৪.৪ ৪.৭ ৫.০ ৫.১

সূত্র: বিশ্বব্যাংক 
প্রথম আলো ১৭ এপ্রিল ২০১৭