ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
জাহাঙ্গীর আলম
(অব.)।।
সর্বশেষ খবর
হল, ভারত
নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর
রাজ্যের নিয়ন্ত্রণরেখায়
পাকিস্তানি রেঞ্জারস
বা আধাসামরিক
বাহিনীর সাত
সদস্যকে গুলি
করে হত্যার
কথা জানিয়েছে
ভারতের সীমান্ত
রক্ষী বাহিনী
(বিএসএফ)।
পাকিস্তনি কর্তৃপক্ষ
অবশ্য হতাহতের
এ খবর
উড়িয়ে দিয়ে
বলেছে, পাকিস্তানি
রেঞ্জারস হত্যাসংক্রান্ত
ভারতীয় পক্ষের
দাবি সম্পূর্ণ
ভুয়া। তবে
কাশ্মীরের ঘরে
ঘরে ভারতীয়
বাহিনীর তল্লাশি
ও গ্রেফতারের
ঘটনা উড়িয়ে
দেয়ার উপায়
নেই। আর
এসবই যে
সংঘটিত হচ্ছে
‘উরি’র
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়, তা
বলাইবাহুল্য। কাশ্মীর
এলাকায় যেখানে
খঙঈ অর্থাৎ
লাইন-অব-কন্ট্রোল
(অস্থায়ী বর্ডার),
সেখানে পৌঁছতে
সর্বশেষ শহর
হল উরি।
কামান পোস্টে
যেতে হলে
উরি অতিক্রম
করতে হয়।
এখানে সৈনিকরা
তাঁবুসহ অস্থায়ী
আশ্রয়ে বসবাস
করে। উরি
অতিক্রম করতে
কামান পোস্টই
একমাত্র আউটপোস্ট,
যেখানে পাকিস্তানের
অভ্যন্তরে যাওয়ার
বাসস্ট্যান্ড। খঙঈ
পার হলেই
বাস পাওয়া
যায়। আর
পাকিস্তানি ট্রাকগুলো
ভারতে, অর্থাৎ
উরিতেই আসে
বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী
নিয়ে। উরি
শহর ঝিলাম
নদীর পাড়ে
আর বারামূল্যা
জেলায়, খঙঈ’র
কাছাকাছি। উরি
মোটামুটি শান্ত
এলাকা, যেখানে
সেনাবাহিনীর (ওই
এলাকার) সামাজিক
কার্যক্রম পরিচালিত
হয়। বিগত
বছরগুলোয় কাশ্মীর
সমস্যা গভীরে
গেলেও উরি
প্রায় শান্ত
ছিল।
পেছনে তাকালে
দেখা যাবে,
সন্ত্রাসীরা খঙঈ
পার হয়ে
ব্রিগেড সদরের
কাঁটাতারের বেড়া
অতিক্রম করে
খুব ভোরে
ঘুমন্ত সৈনিকদের
ওপর আঘাত
হানে। তারা
Incendiary
বুলেট ব্যবহার
করে, যাতে
তাঁবু ও
ক্ষণস্থায়ী শিবিরে
আগুন লাগে
ও সে
কারণে হতাহতের
সংখ্যা বেড়ে
যায়। সন্ত্রাসীদের
মিশন প্ল্যান
ছিল পশতু
ভাষায় লেখা।
আর উদ্ধারকৃত
ম্যাপ থেকে
অনুমিত হয়
যে, ফিদাইনদের
(আত্মঘাতী) লক্ষ্য
ছিল অফিসার্স
মেস। সেখানে
গিয়ে নিজেদের
উড়িয়ে দেয়ার
পরিকল্পনা ছিল
সন্ত্রাসীদের। জানা
যায়, সন্ত্রাসীরা
সিপাহ-ই-সাহাবা
পাকিস্তানের (SSP)
সদস্য, যা
জয়শ-ই-মোহাম্মদ
গ্রুপের অংশ।
চারজন ফিদাইন-আত্মঘাতী
সদস্য ব্রিগেড
সদরে ঢুকেই
গ্রেনেড ছুড়ে
মারে, যাতে
তাঁবু ও
অস্থায়ী আস্তানায়
আগুন ধরে
যায়। সন্ত্রাসীদের
সঙ্গে সৈনিকদের
৬ ঘণ্টা
গোলাগুলি চলে।
এতে চারজন
সন্ত্রাসীই নিহত
হয়। তবে
পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের
এ আক্রমণের
সঙ্গে তাদের
সম্পৃক্ততা অস্বীকার
করে বলে,
স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরিদের
কাজ এটা,
যা ভারতের
ভাষায় সন্ত্রাসী।
পাকিস্তান আরও
বলে, ভারত
জোর করে
অস্ত্রের ভাষায়
কাশ্মীরিদের স্বাধীনতা
আন্দোলন দমিয়ে
দিচ্ছে। তারা
আরও বলে,
গত ৩
মাসে কাশ্মীরে
৮৫ কাশ্মীরি
মারা গেছে,
আন্দোলনে-সংগ্রামে।
আন্দোলনের সূত্রপাত,
ভারতীয় বাহিনী
দ্বারা নিহত
হিজবুল মুজাহিদিনীর
কমান্ডার বুরহান
ওয়ানী নিহত
হওয়ার ঘটনার
মধ্য দিয়ে।
তারপর অনেক
হতাহতের ঘটনা
ঘটেছে। ইতিমধ্যে
ভারতীয় বাহিনী
১১ বছরের
কিশোর নাছির
সাফিকে গুলি
করে হত্যা
করেছে। এ
কিশোরের জানাজায়
হাজারও মানুষ
ভারতীয় বাহিনীর
কারফিউ ভেঙে
রাস্তায় নেমে
আসে। সাফির
সারা শরীরে
ছিল অজস্র
‘পেলেট’,
যা ভারতীয়
বাহিনী ইদানীং
ব্যবহার করছে।
শ্রীনগর হাসপাতালের
এক হিসাবে
বলা হয়েছে,
ভারতীয় বাহিনীর
‘পেলেট’
বুলেটে চোখে
আঘাতপ্রাপ্ত কাশ্মীরির
সংখ্যা অন্তত
৭৫৬। নিউইয়র্ক
টাইমস লিখেছে,
২০১৬ সাল
বিশ্বে কাশ্মীরি
আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তাবাহিনী
দ্বারা চোখ
ধ্বংস করার
বছর হিসেবে
পরিগণিত হবে।
ভারতীয় মানবাধিকার
কর্মীরাও ‘পেলেট’
বুলেট ব্যবহার
নিষিদ্ধের চেষ্টা
চালাচ্ছে। এবার
দেখা যাক,
কাশ্মীর সমস্যার
মূলে কী!
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ
অনুসারে কাশ্মীর
উপত্যকা ছিল
একটি লেক,
যা দেবতা
দ্বারা পানিশূন্য
করে তা
বসবাসের জন্য
ব্রাহ্মণদের আহ্বান
করা হয়।
১৮ শতাব্দী
অব্দি পাশতুন
দুরানী সাম্রাজ্য
এ এলাকা
শাসন করে।
১৮১৯ সালে
শিখ শাসক
রণজিত সিং
কাশ্মীর দখল
করে নেন।
প্রথম ইংরেজ
শিখ যুদ্ধের
(১৮৪৬) পর
লাহোর চুক্তি
অনুযায়ী ইস্ট
ইন্ডিয়া কোম্পানিকে
কাশ্মীর দিয়ে
দেয়া হয়।
প্রতিদানে গুলাব
সিং জম্মু
এবং কাশ্মীরের
মহারাজা হিসেবে
নিজেকে ঘোষণা
দেন। ১৯৪১
সালের আদমশুমারি
অনুযায়ী, কাশ্মীরের
৭৭% শতাংশ
মুসলিম, ২০
ভাগ হিন্দু
এবং ৩
ভাগ শিখ
ও বুদ্ধ
ধর্মাবলম্বী। ১৯৪৭
সালে কাশ্মীরের
মহারাজ ছিলেন
হরি সিং।
তখনকার সরকার
চাচ্ছিল, কাশ্মীর
স্বাধীন দেশ
হিসেবে থাকুক,
যাতে মুসলিম-হিন্দু
মিলে দেশটিকে
এগিয়ে নেয়া
যায়।
পাক-ভারত
বিভাগের সময়
বিপুলসংখ্যক হিন্দু
ও শিখ
লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি,
শিয়ালকোর্ট থেকে
ভারতে আসে
এবং মুসলমানদের
দ্বারা ব্যাপক
নিগৃহীত হওয়ার
কথা প্রচার
করে, যা
কাশ্মীর পরিস্থিতি
সংঘর্ষময় করতে
সাহায্য করে।
মহারাজা নিজেও
কাশ্মীরে মুসলিম
নিধনে জড়িয়ে
পড়েন। একটি
ব্রিটিশ কমিশন
৭০ হাজার
মুসলিম হত্যার
তথ্য দেয়;
যা পাকিস্তান
২ লাখ
বলে দাবি
করে। এর
ফলে ৪
লাখ কাশ্মীরি
মুসলিম পাকিস্তানে
আশ্রয় নেন।
পরবর্তী সময়ে
মহারাজা ভারতের
অন্তর্ভুক্তি চুক্তি
স্বাক্ষর করেন।
কেননা, পাকিস্তান
কাশ্মীরে সব
ধরনের পণ্য
সরবরাহ বন্ধ
করে দিয়েছিল।
১ নভেম্বর
১৯৪৭ সালে
মাউন্ট ব্যাটেন
লাহোরে জিন্নাহ্র
সঙ্গে কথা
বলে ভারত-পাকিস্তানের
যেসব রাজ্যে
রাজা-মহারাজাদের
শাসন বহাল
আছে, সেখানে
গণভোট দিতে
ও নাগরিকদের
সম্মতিতে ভারত
বা পাকিস্তানে
অন্তর্ভুক্তিতে অথবা
নিজেরা স্বাধীন
থাকার মত
আদায়ের চেষ্টা
করেন। ভারত-পাকিস্তান
যৌথভাবে জাতিসংঘে
চার্টার নং
৩৫ অনুসারে
সংঘর্ষপীড়িত এলাকায়
গণভোটের আহ্বান
জানায়। ইতিমধ্যে
পাকিস্তান পশতুন
ও কাশ্মীরিদের
নিয়ে ভারত
অন্তর্ভুক্ত কাশ্মীরে
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষণ
ও অনুপ্রবেশ
ঘটায়, যাতে
কাশ্মীর পাকিস্তানের
অন্তর্ভুক্ত হয়।
ভারত শেখ
আবদুল্লাহর প্রতিরোধ
সত্ত্বেও কাশ্মীর
সমস্যা জাতিসংঘে
উত্থাপন করে।
২১ এপ্রিল
১৯৪৮ সালে
জাতিসংঘ ভারত-পাকিস্তান
সমস্যার ওপর
কমিশন গঠন
করে। যুদ্ধবিরতি
কার্যকর করা
ও ভারত
কর্তৃক সামরিক
বাহিনীর উপস্থিতি
কমিয়ে আনার
কথা বলে।
সে থেকে
আজ অব্দি
৪টি যুদ্ধ
হয়ে গেছে
ভারত-পাকিস্তানের
মধ্যে (কারগিল
যুদ্ধসহ)।
অর্থনৈতিক ও
সামরিক ক্ষেত্রে
ভারত প্রভূত
উন্নয়ন সাধন
করলেও আনুপাতিক
হারে পাকিস্তান
তেমন উন্নয়ন
ঘটাতে সক্ষম
হয়নি। তবে
ভারত-পাকিস্তান
উভয়ই এখন
পারমাণবিক শক্তিধর
এবং সম্ভবত
দুই দেশেরই
second
strike capability অর্জিত
হয়েছে। অর্থাৎ
একটি পারমাণবিক
বোমার আঘাত
সহ্য করে
জল-স্থল
যে কোনো
স্থান থেকে
আক্রমণকারী দেশকে
আঘাত হানার
সক্ষমতা অর্জন
করেছে। তা
হলে তো
বিপদ দুই
দেশেরই। আর
ক্ষুদ্র পারমাণবিক
বোমার আঘাত
কী সাংঘাতিক
হয়, তা
জাপানের হিরোশিমা
ও নাগাসাকি
শহর দুটো
দেখলেই বোঝা
যায়। প্রচুর
জনসংখ্যা অধ্যুষিত
ভারত-পাকিস্তানের
ক্ষুদ্র পারমাণবিক
বোমা হিরোশিমায়
নিক্ষিপ্ত বোমার
চেয়ে সহস্রগুণ
বেশি ধ্বংসাত্মক।
বস্তুত ভারত-পাকিস্তানের
মিলিটারি প্রতিদ্বন্দ্বিতা
এমনই যে,
১৮ সেপ্টেম্বর
চারজন ফেদাইন
আক্রমণে উরির
ব্রিগেড সদরে
১৮ সেনার
মৃত্যু ও
৩৫ সদস্যের
গুরুতর আহত
হওয়ার ঘটনার
মধ্য দিয়েই
শেষ হয়ে
যায় না।
২৯ সেপ্টেম্বর
ভারতের কমান্ডোরা
পাকিস্তানের অভ্যন্তরে
তাদের মতে
সন্ত্রাসীদের আস্তানায়
ঢুকে হতাহত
ও আবাসস্থল
ধ্বংস করে
ফেরত এসেছে
বলে জানান।
বর্তমানে পাকিস্তান
ও ভারত
উভয়েরই সংকুচিত
কয়েকটি মাত্র
অপশন রয়েছে।
যেমন- ক.
গোলন্দাজ বাহিনী
দিয়ে অপরপক্ষের
অবস্থান দুর্বল
করা এবং
বাংকারে আবদ্ধ
রাখা। খ.
বিশেষ প্রশিক্ষিত
বাহিনী দিয়ে
অপর দেশের
অভ্যন্তরে নির্দিষ্ট
টার্গেটে আক্রমণ
এবং তা
ধ্বংস করে
ফেরত আসা।
এতে হেলিকপ্টারসহ
বিশেষ সরঞ্জাম
ব্যবহ্নত হয়।
গ. সুবিধাজনক
টার্গেটে LOC-এর
অঞ্চল হঠাৎ
প্রচণ্ড আক্রমণ
করে সেটা
অপর দেশের
ভেতরে নিয়ে
যাওয়া। ঘ.
LOC-তে
প্রতিনিয়ত গোলাবর্ষণ
ও শীতের
আগেই Logistic
এবং Reinforcement
কষ্টকর করে
দেয়া।
এসবের মধ্যে
আন্তর্জাতিক মহল
ও বিশ্বমিডিয়া
মোটামুটি পাকিস্তানকে
অবিশ্বস্ত, হঠকারী,
বেলুচিস্থানে অস্ত্রের
মাধ্যমে আন্দোলন
দমানো ও
কাশ্মীরে আন্দোলনকারীদের
সাহায্য ও
ইন্ধন জোগানো
দেশ বলে
অভিযোগ তুলেছে।
অন্যদিকে ভারত
অধিকৃত কাশ্মীরে
গণহত্যা হচ্ছে,
গুলি-‘পেলেট’
গান দিয়ে
কাশ্মীরিদের অন্ধ
ও চিরকালের
জন্য বিকলাঙ্গ
দেয়ার অভিযোগ
তুলেছে পাকিস্তান।
কাশ্মীরে এ
পর্যন্ত এ
বছর ১০৫
জনের অধিক
নিরস্ত্র আন্দোলনকারী
ভারতীয় বিভিন্ন
বাহিনীর হাতে
নিহত হয়েছেন।
‘পেলেট’
গান ব্যবহারে
অন্ধ হয়েছে
প্রায় ৩০০
কিশোর-যুবক।
অন্যদিকে ভারত
পাকিস্তানকে সন্ত্রাসীদের
মদদদাতা হিসেবে
প্রচার করে
প্রতিটি আন্তর্জাতিক
সংস্থায় ‘একঘরে’
করতে সচেষ্ট।
পাকিস্তানসহ পৃথিবীর
৯টি দেশে
পারমাণবিক বোমা
আছে। একটি
হিসাব অনুসারে,
পারমাণবিক বোমা
বহনকারী মিসাইল/বোমার
সংখ্যা আমেরিকার
৬,৯৭০টি,
রাশিয়ার ৭,৩০০টি,
যুক্তরাজ্যের ২১৫টি,
ফ্রান্সের ৩০০টি,
চীনের ২৬০টি,
ভারতের ১১০-১২০টি,
পাকিস্তানের ১২০-১৩০টি,
উত্তর কোরিয়ার
১০টি, ইসরাইলের
৮০টি, ইরানের
কোনোরকম পরীক্ষা
এখনও হয়নি।
এছাড়া বেলজিয়াম,
জার্মানি, ইতালি,
নেদারল্যান্ডস এবং
তুরস্কে পারমাণবিক
বোমা মওজুদ
আছে, যা
মওজুদকারীরা এসব
স্থান থেকে
তা ব্যবহার
করতে পারবে।
একটি হিসাব
মতে, পাকিস্তানের
যে ১৩০টি
পারমাণবিক বোমা
ব্যবহারের জন্য
তৈরি আছে,
তা যে
কোনো পারমাণবিক
যুদ্ধে নিরাপদে
ব্যবহারের ব্যবস্থা
নেয়া আছে।
দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক
সংস্থাগুলো বলছে,
পাকিস্তানের অন্তত
৬টি গোপন
অবস্থান আছে,
যেখানে পারমাণবিক
বোমা মওজুদ
আছে। সবচেয়ে
দেখার ব্যাপার
হল, পাকিস্তান
'No
first use doctrine' অনুমোদন
বা গ্রহণ
করেনি। বরং
ভারতের বৃহৎ
সশস্ত্র বাহিনী
এবং জল,
স্থল এবং
আকাশপথে তাদের
ব্যাপক ক্ষমতা
থাকায় যে
কোনো আক্রমণে
ভারতের বিরুদ্ধে
প্রথমেই পারমাণবিক
বোমা ব্যবহারের
কথা বলে
আসছে। ভারত-পাকিস্তানের
১,৮০০
মাইল বর্ডার,
অল্প সময়ে
অনেক যুদ্ধ,
ধ্বংস ও
ক্ষয় দেখেছে।
এতে ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে দুটি
দেশের জনগণ,
অর্থনীতি ও
নিরাপত্তা। পাকিস্তানের
NCA
(National Command Authority) প্রধানমন্ত্রী
প্রধান এবং
জয়েন্ট চিফ
অব স্টাফ
কমিটি নিয়ে
পারমাণবিক শক্তির
ব্যবহার নির্ধারণকারী
সংস্থা। তবে
এটা সত্য,
ভারত-পাকিস্তান
উভয় দেশই
অস্থিতিশীল হলে
পারমাণবিক বোমার
সংরক্ষণ ও
নিরাপত্তা নিয়ে
আন্তর্জাতিক শংকা
বেড়ে যায়।
ভারত-পাকিস্তান
পারমাণবিক ইস্যুতে
কয়েকটি চুক্তি
করেছে। ক.
১৯৮৯ সালে
একে অন্যের
পারমাণবিক স্থাপনায়
আঘাত হানবে
না বলে
সম্মত হয়েছে
এবং প্রতিবছর
১ জানুযারিতে
দুই দেশ
নিজেদের স্থাপনার
তথ্য একে
অপরকে প্রদান
করে আসছে।
খ. ২০০৫
সালে ব্যালাস্টিক
মিসাইল টেস্ট
চুক্তিতে দুটি
দেশই পরীক্ষার
সময় ও
স্থান একে
অপরকে জানিয়ে
আসছে। গ.
দুটি দেশই
২০০৪ সালে
অন্য একটি
চুক্তিতে হটলাইন
স্থাপনের মাধ্যমে
যে কোনো
দুর্ঘটনার তথ্য
একে অন্যকে
দ্রুত জানাবে;
যাতে কেউ
পারমাণবিক শক্তি
ব্যবহৃত হয়েছে,
এমন মনে
না করে।
খঙঈ বরাবর
যে কোনো
বোমাবর্ষণ এবং
পাল্টা বোমাবর্ষণের
ঘটনায় ভারতের
চেয়ে পাকিস্তানের
হতাহতের সংখ্যা
বেশি। কেননা
খঙঈ রেখার
পাকিস্তান দিকে
বেসামরিক জনগণের
বসতি রয়েছে;
কিন্তু ভারত
অংশে সে
তুলনায় বেসামরিক
জনগণের উপস্থিতি
কম। অন্যদিকে
ভারত-পাকিস্তানের
ক্ষমতাসীন সরকারের
নীতি এবং
ভারত-পাকিস্তানের
সশস্ত্র বাহিনীর
তৎপরতা প্রকাশের
বিষয়টিও এখন
ব্যাপক প্রচারণার
ব্যাপার। একে
অন্যকে কতটুকু
ঘায়েল করল,
তা উভয়
দেশে ব্যাপক
আগ্রহ ও
বিশাল প্রচারণায়
জনগণের সামনে
উপস্থাপিত করা
হয়। তবে
উভয়েই তাদের
সীমারেখা জানে
এবং তাদের
সরকারের স্বাচ্ছন্দ্যের
ব্যাপারে সজাগ।
অনেক পণ্ডিত
বলেন, ভারতের
সশস্ত্র বাহিনী
যেমন রাজনৈতিক
সিদ্ধান্তের আবর্তে
কাজ করে,
ততটা পাকিস্তানের
সশস্ত্র বাহিনী
নয়। পাকিস্তান
সশস্ত্র বাহিনী
বিশেষত সেনাবাহিনীর
সিদ্ধান্ত ত্বরিত।
ভারত-পাকিস্তান
উভয় দেশের
পারমাণবিক বোমাগুলো
বিভিন্ন গোপন
স্থানে, ব্যাপক
প্রতিরক্ষা সংবলিত
এলাকায় সুনিয়ন্ত্রিত
আছে। দুটি
দেশই পারমাণবিক
বোমা ব্যবহারের
ফলাফল কী-
তা জানে।
বায়ুতে তা
কিরূপ ভয়ানক
বিস্তার ঘটাবে,
পানির চলমান
স্রোতে তা
কতদূর গড়াবে,
কত বছর
ধরে আক্রমণ
স্থানে কিছু
স্থাপন, রোপণ
ও উৎপাদন
সম্ভব হবে
না, স্বাস্থ্য
ঝুঁকি ও
চিকিৎসা ব্যয়
কত হাজারগুণ
বেড়ে যাবে,
তা তারা
জানে। বস্তুত
কোনো দেশের
সামরিক কমান্ডারই
চান না,
তার সময়ে
এমন ঘটনা
ঘটুক, যেজন্য
ইতিহাস তাকে
পরিহাস করবে।
দেশের শাসকরাও
ঠিক তদ্রূপ।
ছোট একটি
আণবিক বোমার
আঘাতে জাপান
পর্যুদস্ত হয়েছিল।
এখনও হিরোশিমা,
নাগাসাকিতে বিকলাঙ্গ
শিশু জন্ম
নিচ্ছে। আর
তার চেয়ে
হাজারগুণ ক্ষমতাশালী
বোমার আঘাতে
ভারত-পাকিস্তান
ও তৎসংলগ্ন
এলাকাগুলোর কী
হবে, তা
সহজেই অনুমেয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের
ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে
কেউই স্থায়ী
বন্ধু বা
স্থায়ী শত্রু
নয়। ভারত-পাকিস্তান
আমাদের কাছের
প্রতিবেশী। ভারত-পাকিস্তান
দুটি দেশই
সামরিক শক্তিতে
বাংলাদেশের তুলনায়
অনেক বড়।
সেজন্য এই
দুটি দেশে
ঝড় উঠলে
আমাদের স্বার্থ
ক্ষুণ্ণ হওয়ার
আশংকা দেখা
দেয়। ঝড়
থামার পর
তার ধ্বংসলীলা
পরিস্ফুট হয়।
তখন যেন
আমাদের নিজ
দেশের নাগরিক
ও আন্তর্জাতিক
সম্প্রদায়কে সরি
বলতে না
হয়। সেরকম
একটি সুন্দর,
গঠনমূলক ও
বাংলাদেশকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি
আমাদের দরকার।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
জাহাঙ্গীর আলম
(অব.) : তুরস্কে
দায়িত্ব পালনকারী
সাবেক সামরিক
অ্যাটাশে